প্রকাশিত: ২৯/০৯/২০১৬ ৭:৪৪ এএম

indexএম.বশিরুল আলম,লামাঃ

লামায় পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন অনেক কৃষক। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে তামাকের বিকল্প হিসেবে পেঁপে চাষে মনযোগি হবে চাষীরা। মাটির গুনাগুন ভালো হওয়ায়, দেশের অন্যান্ন শহরে পার্বত্যালাকার পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। শুধুমাত্র ফল নয়, সবজি হিসেবেও পেঁপে ব্যাপক চাহিদা মেটাচ্ছে। এ ফলে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। এ পাহাড়ী ভুমিতে পেঁপের চাষ ভালো হয়। সে হিসেবে ৪০ শতক জমিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার থেকে দশ হাজার টি পেঁপে হয়। স্থানীয় উপজাতি ও অউপজাতিরা পাহাড়ে পেঁপে চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে এই ফল লামা-আলীকদমের পাহাড়ে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। লামা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টি পূরণে শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভর করে থাকে। এ বিষয়টি মাতায় রেখে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল চাষ হয়। এর মধ্যে পুষ্টিগুন সম্পন্ন অনেকগুলো ফলমুল পাহাড়ী অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি এসব চাষের উপযোগিতা রয়েছে। লামা স্বাস্থকমপ্লেক্সের উপসহকারী ডাঃ ফাতেমা জান্নাত জানান, অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ. আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রভুতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমিনাশক ও প্লীহা যকৃতের জন্য উপকারী।

পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ে কিংবা সমতলে সারা বছরই পেঁপের চাষ হয়। ফলে বারো মাস এটি সবজি বা ফল হিসেবে পাওয়া যায় এখানকার হাঠ-বাজারে। স্থানীয়রা পেঁপে চাষ করে নিজের পরিবারে পুষ্টিকর ফল ও সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করতে দেখা যায়।

লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ নুরে আলম জানান, পেঁপের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে এই এলাকায় স্থানীয় পেঁপে বেশি চাষ হয়। এছাড়া বানিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল শাহী, থাইল্যান্ডীসহ আরো কয়ে প্রজাতির পেঁপে চাষ করছেন অনেকে। উচুঁ ও মাঝারি উচুঁ উর্বর দো-আশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরণের মাটিতেই চাষ সম্ভব। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রমাসের মাঝামাজি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। এছাড়া শাহী পেঁপে সারা বছরই চাষ করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিনে চারা তৈরি করলে, দেড় থেকে দু’মাসের মাতায় রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে কৃষি সূত্রে জানাযায়। চারা রোপনের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়। পানি নিকাশের জন্য দুই সারি মাঝখানে ৫০ সে:মি: নালা রাখতে হয় (সমতল জমিতে)। কৃষকদের মতে গুনগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া মাটি পরীক্ষা করে এর ধরণ অনুযায়ী সারের ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে জৈব সার ব্যবস্থাপনা উত্তম বলে কষকরা জানান।

শিলেরতুয়ার কৃষক উপুহ্লা মার্মা জানান, এই এলাকায় অর্থকরি অনেক ফসল ফলানো সম্ভবনা রয়েছে, প্রয়োজন শুধু সরকারি সহযোগিতা। আগাম অর্থ বিনিয়োগ, উৎপাদিত কৃষি পন্য সংরক্ষণ, বাজার নিশ্চয়তা পেলে কৃষকরা তামাকের বিকল্প অন্য ফসল চাষ করবে। কৃষক নুর উল্ল্যাহ বলেন, সরকার বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপন করলে কৃষিপন্য সংরক্ষণ করা গেলে তামাক চাষের ব্যপকতা রোধ হবে। একটি কোল্ড স্টোর (হিমাগার) না থাকায় প্রতি মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমান নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পন্যে নষ্ট হয়ে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির শিকারহন। এর ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জেনেও বছর বছর তামাক চাষের প্রতি ঝুকে পড়ছেন কৃষকরা। সরকার বা দেশের বিত্তবানদের প্রতি এলাকাবাসি একটি হিমাগার স্থপনের দাবী জানিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোন সহযোগিতা আমরা পাইনা। ফলে রোগবালাইয়ের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক কৃষি বিভাগের লোকেরা হাজির হন না। এ ব্যাপারে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ নুরে আলম’র কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে এই প্রতিনিধিকে বলেন বলেন, আমাদের জনবল কম থাকায় কৃষকদের যথাযত সার্পোট দিতে পারছিনা, আগামিতে এই সমষ্য হবেনা।                                                 রুপসিপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, প্রতি একর ঁেপপে চাষে ২৫ হাজার টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক, এনজিও বা নিকটাত্মীয়দের থেকে সুদের উপর ঋণের টাকা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা পেঁপে চাষ করছেন। তিনি আরো বলেন এই এলাকায় প্রশিক্ষন ও সরকারি সহজ শর্তে ঋণসহযোগিতা পেলে কৃষকরা পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হওয়ার যতেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ ও কৃষিশিল্প বান্ধব কৃষকদের এ দাবী পুরণে সরকার বা কোন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসা উচিত।

পাঠকের মতামত

পর্যটনে সেন্টমার্টিনের বিকল্প হতে চায় কুতুবদিয়া দ্বীপ!

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। দ্বীপটি বাতিঘরের দ্বীপ নামে ও পরিচিত। ...